কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুক্ষয় রোধে টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুক্ষয় রোধে টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুক্ষয় রোধে টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুক্ষয় রোধে টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের




মিজানুর রহমান,কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুক্ষয় রোধে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বসবাসরত জনসাধারণ ও কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় বিনিয়োগকারীরা। গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রতিনিয়ত বালুক্ষয় বিষয়টি হতাশায় রূপ নিয়েছে। বালুক্ষয়ের এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলা ভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যাবলী। ফলে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটার মানচিত্র।

 

 

 

গণমাধ্যমে সমস্যাটি বার বার উঠে আসলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। রক্ষাপ্রাচীরের চারদিকে প্রতিরোধ শক্তির ব্যবস্থা না করে গুপ্তধন রক্ষার চেষ্টা অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের হতাশাজনক পরিণতির প্রমাণ করে। ঠিক তেমনি সৈকতের বালুক্ষয় রোধের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ হাতে না নিয়ে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ কতোটুকু সফল হবে সেটাই এখন আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠছে সচেতন মহলে। বিশ্বব্যাংকের ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ খবরে উপকূলবাসী খুশি হলেও প্রতিবছরের ন্যায় বর্ষার এ মৌসুমে অবিরাম গতিতে বালুক্ষয়ের এমন পরিনতি দেখে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদেরকে।

 

 

১৯৮৪ সাল থেকে কুয়াকাটার বিভিন্ন অংশে বেড়িবাঁধ রক্ষায় সিসি ব্লক ব্যবহার করা হয়। তবে এ পর্যন্ত তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ইতোপূর্বে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের মাঝিবাড়ি ও মিরাবাড়ি সংলগ্ন তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিসি ব্লক দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হয়। দুঃখের বিষয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত এ প্রচেষ্টা স্রোতে আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে ব্যর্থ হয়ে যায়। সম্প্রতি ভাঙন ঠেকাতে কুয়াকাটার তিনটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধের স্লোপে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়। দু’দিন পার না হতেই তাও স্রোতের তোড়ে ধুয়ে গেছে সাগর গর্ভে।

 

 

 

অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, গ্রোয়েন বাঁধ সৈকতের বালুক্ষয় রোধে একটি কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৈকত ঘেঁষা স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন একটি প্রযুক্তিগত কৌশল। এ কৌশল ব্যবহার করে প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের তাণ্ডব থেকে সৈকতকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। তাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান বালুক্ষয়ের গতিধারা বন্ধ করতে না পারলে পুনর্নির্মিত বেড়িবাঁধকেও গ্রাস করে ফেলবে। ফলে দেশের অর্থ অপচয়সহ বিনষ্ট হবে বেড়িবাঁধের ভেতরে হাজার হাজার হেক্টর আবাদী জমি। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে সৈকত ঘেষা কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬০ হাজার মানুষের জীবন যাত্রা।

 

 

ইতোমধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার বেলাভূমি সমুদ্র গর্ভে বিলীন হওয়ায় এ বিশ্লেষণের প্রমাণ পাওয়া যায়। নিশ্চিহ্ন হওয়ার তালিকায় নাম ওঠেছে বৃটিশদের নির্মিত ডাক বাংলো, কুয়াকাটার বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম রেস্ট হাউস, দৃষ্টিনন্দন শাল বাগান, ফয়েজ মিয়ার নারিকেল কুঞ্জ, কুয়াকাটা ইকোপার্ক ও আবাসিক স্থাপনাসহ নানা প্রজাতির বনজ ও ফলদ গাছ। তাছাড়া ধ্বংস যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পার করছে মসজিদ-মন্দির, স্কুল-মাদরাসা, শুঁটকি পল্লী, শিশু বিনোদন কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

 

 

গ্রোয়েন বাঁধ সম্পর্কে কথা হয় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) লতাচাপলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, সিসি ব্লক দিয়ে সৈকতের ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। এতে শুধু সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় হবে। পতেঙ্গা সৈকত রক্ষায় সরকারের গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণের সফল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এখানেও গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা দরকার।

 

 

এ ব্যাপারে উপকূলীয় মানব উন্নয়ন সংস্থার (সিকোডা) নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) এর কেন্দ্রীয় কমিটিরি সহসম্পাদক মো: মিজানুর রহমান বলেন, সিসি ব্লক দিয়ে সৈকতের ভাঙন রোধ এটা বৃথা প্রয়াস মাত্র। গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তনে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।

 

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন এ বিষয়ে জানান, কুয়াকাটা সৈকতের অব্যাহত বালুক্ষয় পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ সংরক্ষণে বালুক্ষয় রোধ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মিত হলে তা সৈকত রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এর চেয়ে যদি আরও কোন প্রযুক্তি থাকে তাহলে তাও করা উচিৎ।

 

 

কুয়াকাটা পৌরমেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ একটা ভালো উদ্যোগ। তবে পাশাপাশি বালুক্ষয় রোধে বিচ রক্ষা প্রকল্পের কাজও শুরু করা প্রয়োজন। দ্রুত এ কাজ শুরু না হলে পুনর্নির্মিত বেড়িবাঁধও এক সময় সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

 

 

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো: ওয়ালিউজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ ও বালুক্ষয় রোধ দুটি আলাদা প্রকল্প। বালুক্ষয় রোধে আমাদের পরিকল্পনা আছে। এ বিষয়ে আইডব্লিউএম কর্তৃক পরীক্ষা নিরিক্ষার কাজ চলছে তাদের প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে কি করা উচিৎ।

 

 

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ক্ষয়িষ্ণু মানচিত্র দেখে হতবাক হন হাজার পর্যটকসহ এলাকাবাসী। বেড়িবাঁধ পনুর্নির্মাণের পাশাপাশি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালুক্ষয় রোধে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া গ্রোয়েন বাঁধে পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা যেতে পারে এক্সক্লুসিভ জোন।

 

এতে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। দ্রুত সৈকত রক্ষার্থে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণসহ কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন পর্যটক, বিনিয়োগকারী ও কুয়াকাটার উন্নয়নকর্মীবৃন্দ।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD